করোনার কাছে আমরা হার মানবো নাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Spread the love

নিজেকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি অপরের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা যা নির্দেশনা সেগুলো মেনে চলে নিজের জীবনকে চালাতে হবে।’

সোমবার (১৫ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই আমাদের মানুষের মধ্যে যেন একটা আস্থা থাকে, বিশ্বাস থাকে, সেই বিশ্বাস-আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। আমরা হার মানবো না, মৃত্যু তো হবে, মৃত্যু যেকোনো সময় যেকোনো কারণে হতে পারে। কিন্তু তার জন্য ভীত হয়ে হার মানতে হবে? এ ধরনের একটা অদৃশ্য শক্তির কাছে এটাতো না। সেজন্য আমাদেরও সেভাবে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’

‘সেজন্য আমি দেশবাসীকে বলবো- স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যা যা নির্দেশনা সেগুলো মেনে চলে নিজের জীবনকে চালাতে হবে। কিন্তু নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, অপরকেও সুরক্ষিত রাখা সেটাকেও মাথায় রাখতে হবে। সেটা যেন সবাই করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে মানুষকে বাঁচানো, আবার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা সেগুলো যাতে ঠিক থাকে সেদিকেও আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছি।’

‘আমি বার বার মানুষের মধ্যে যাই এ কারণে। আজকে ডিজিটাল পদ্ধতি আছে বলে আমি যেতে পারছি, কথা বলতে পারছি।’

ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছিলাম বলে আজকে করোনা নামে একটা ভাইরাস সারা বিশ্বকে একেবারে স্থবির করে দিয়েছে তারপরও আমরা আমাদের দেশের মানুষের সেবা করতে পারছি। তাদের জন্য কাজ করতে পারছি।’

‘তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে শুরু করে, আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ সব ধরনের সুযোগ আমরা দিতে পারছি। যেহেতু আজকে সত্যিই বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছি। সেদিক যে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। এটা আমাদের আনন্দের বিষয়।’

এসএসএফ সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, ক্রাইমের ধরণটাও বদলে যাচ্ছে। আগে এক ধরনের হতো এখন অন্য ভাবে হয়। প্রতিনিয়ত আমরা এটাও দেখতে পাই যত প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে, প্রযুক্তি যেমন ভালো কাজে ব্যবহার হয়, আবার মন্দ কাজেও ব্যবহার হয়।’

‘সেদিকে রক্ষ্য রেখে আমাদের যারা নিরাপত্তায় আছেন তাদেরকেও সেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। কি ধরনের ক্রাইম হচ্ছে সেটা জেনে নিয়ে সেই ক্রাইম কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। তার জন্য যেমন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ইক্যুপমেন্টসও দরকার।’

এসএসএফ’র আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতদূর পেরেছি এসএসএফ এর জন্য সব কিছু করেছি। সব ধরনের ব্যবস্থা, যখন যেটা আধুনিক আসে আমরা সংগ্রহ করার চেষ্টা করি।’

যারা নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাদের জন্য নিজের চিন্তার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে শুধু যাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে শুধু তাদেরটা নয়, যারা নিরাপত্তা দেবে তাদেরটাও আমার চিন্তা করতে হয়। সেটা যদি চিন্তা না করতাম তাহলে আমি এগুলো কিছুই মেনে নিতাম না।’

১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বৈরি পরিবেশে দেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাভাবিক ভাবে একদিকে যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, আরেকদিকে খুনীরা ক্ষমতায় সেই পরিবেশে বাংলাদেশে যখন এসেছি তখন তো আমরা কিছুই ছিল না। আলাদা গাড়িও ছিল না। আমি সেটা চিন্তাও করিনি। বাস ভাড়া করে চলেছি, রিক্সা-ভ্যানে চলেছি, নৌকায় চলেছি, সারা বাংলাদেশ ঘুরেছি।’

‘কি কারণে করেছি- একটাই কারণ এদেশের জন্য কিছু করতে হবে। আমার বাবা যে কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারেননি সেটা আমাকে সম্পূর্ণ করতে হবে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে তারা আমাকে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে, সুযোগ দিয়েছে তাদের সেবা করার।’

করোনা ভাইরাসে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থ, অস্ত্র কোন কাজে আসছে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই একটা ভাইরাস, সারা পৃথিবী, যত শক্তিধর দেশ হোক, কত শক্তিধর দেশ তারা কথায় কথায় বোম্বিং করতে বা গুলি করতো, মানুষ মারতো আজকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বোম্বিং করতে পারে না, গুলি করতে পারে না, কিছুই করতে পারে, তারা আজকে স্থবির।’

‘শক্তিশালী দেশ অর্থনৈতিক ভাবে, তাদের অর্থ সম্পদ কোথায় আছে, আজকে কোথায় সেই ধনী দেশ, অর্থ সম্পদ কোন কাজে লাগছে না। কারণ করোনা ভাইরাস। এই একটা ভাইরাস যাকে দেখা যাচ্ছে, অদৃশ্য একটা শক্তি, জানি না আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কি খেলা। সেই অদৃশ্য শক্তির ভয়ে সারা বিশ্ব আজকে স্থবির, সারা বিশ্ব স্থম্ভিত। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মৃত্যু। … করোনা ভাইরাস আজকে সব শক্তিকে স্থবির করে দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মজিবুর রহমান।

 এসএসএফ সদস্যদের একদিনের বেতন অনুদান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে প্রদান করা হয়। এসএসএফ সদস্যদের পক্ষে তাদের মহাপরিচালক অনুদানের চেকটি হস্তান্তর করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published.