শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখতে অনলাইন ক্লাস চালুর পরিকল্পনা আছে সরকারেরঃ শিক্ষা বিষয়ে আমাদের করণীয় সেমিনারে বক্তারা

Spread the love

করোনা সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। ব্যাহত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া। এই করোনা সংকট থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজন করেছে অনলাইন সেমিনার- ‘বর্তমান বৈশ্বিক সংকটকালে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের করণীয়’। আজ ৬ জুলাই সোমবার সকাল ১১টায় এই অনলাইন সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। পর্বটি সরাসরি প্রচারিত হয় আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপার সঞ্চালনায় আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, এমপি, সম্মানিত অতিথি হিসেবে যুক্ত হবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ-এর মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, বাংলা একাডেমি’র সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ শাহিনুর রহমান, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক সাংবাদিক শ্যামল দত্ত। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল খালেক।

শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তিখাতে যত অর্জন, যতটুকু আমরা এগিয়ে এসেছি পুরোটাই করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও এই রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি ছিলো না, সবাইকে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে হচ্ছে। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে আমাদের অনলাইন এডুকেশন সিস্টেমে যেতেই হতো, সেখানে আমরা অনেক আগেই এই সংকটকালীন সময়েই অনলাইন এডুকেশন চালু করতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, গত ১৭ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের ক্লাশ চালু করেছি। এছাড়াও অনলাইনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো তাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নিচ্ছেন। আমরা দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জরিপ করে দেখেছি ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছাতে পারছি। বাকি শিক্ষাথীদের জন্য যাদের কাছে অনলাইনে পৌছাতে পারছি না তদের কাছে পৌছাতে সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা শিক্ষকদের অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের যাতে শিক্ষা জীবনে ব্যহত না হয়, তারা যেনো ঝড়ে না পড়ে সেক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

শামসুজ্জামান খান বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু প্রথমেই একটি শিক্ষা কমিশোন গঠন করে ছিলেন, বিজ্ঞানী ডঃ মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা কে তিনি কমিশনের চেয়ারম্যান করেছিলেন। একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনষ্ক এবং মানব সম্পদ সৃষ্টির একটি অসাধারন উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন।

কামরুল হাসান খান বলেন, যেখানে বিশ্বের সবাই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমরা এখনও এটাকে কন্ট্রোলে রাখতে পেরেছি। বিশ্বে যেখানে মৃত্যুর হার ২.৫%, আমাদের সেখানে ১.৫% এর নীচে আছে। আমাদের সকলকে স্বাস্থবিধি মেনে চলতে হবে।

মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ে অনলাইন ক্লাশ নেয়া হচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবাই অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনা করে ক্লাশ নিচ্ছে।

মোস্তফা জব্বার বলেন, আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতেছি তার ভিত্তি কিন্তু আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্থাপন করেছেন। এটিও মনে রাখা উচিত আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছেন। তার সুফল আমরা এখন ভোগ করছি। আমাদের এখন প্রায় সাড়ে দশ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। আমাদের ৩৮০০ ইউনিয়নে এখন ইন্টারনেট কানেক্ট সংযোগ আছে। যার সুফলতা আমরা পাচ্ছি।

আমরা শিক্ষা ব্যবস্থা কিংবা ক্লাস রুমকে যদি ডিজিটাল না করতে পারি তাহলে কিছুটা পিছিয়ে যাবো। ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নেট রেইট ২৫% কম নিয়ে থাকি। আমরা ৬০০ এর মত ক্যম্পাসে ফ্রি কানেক্টিভিটি দিয়েছি। আমি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এবং শিক্ষকদের জন্য বিনামূল্যে ব্যন্ডউইথ এর ব্যবস্থা করবো। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়েও ইন্টারনেট এর ব্যবস্থা করবো।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব গুলোর যথযথ ব্যবহার যেন হয় তা দেখাশুনা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রালয়ের প্রতি অনুরোধ করছি। অনেক প্রতিষ্ঠানের ল্যাব সঠিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। আমাদের ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির জন্য শিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা হবে। আমরা আমাদের সন্তানদের কাজে লাগিয়ে আমরা ডিজিটাল ডিভাইস, সফটওয়্যার তৈরি করতে পারি। নিজস্ব মেধায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এই প্রত্যাশা করি।

অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, করোনা সংকটের এই মুহুর্তে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনলাইনে নিয়ে আসতে হবে, একেবারে কেজি থেকে শুরু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। আমাদের সামনে যেই চ্যালেঞ্জ তা মোকাবিলা করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বান জানাই।

আমরা মাননীয় ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের কাছে অনুরোধ জানাবো শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে কিংবা সহজলাভ্য ইন্টারনেট এর ব্যবস্থা করতে। এতে করে এই সংকট মুহূর্তে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা আরও গতিশীল করতে সহজলাভ্য ইন্টারেন্ট এর বিকল্প নেই।

আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যানে যা যা করতে হয় আমরা তা করতে প্রস্তুত। আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মেস মালিকদের বলবো আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি সদয় হউন।

অধ্যাপক ডঃ শাহিনুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক মহামারি এই সময়ের কারনে গত ১৭ই মার্চ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের পর পর আমাদের সংসদ টিভি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠ দান কার্যক্রম চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদেরকে কানেক্ট করতে পারতেছি, ছাত্র-ছাত্রীদের আন্তরিকতায় আমরা অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেরিতে হলেও অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পেরেছি, যা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

সাংবাদিক শ্যামল দত্ত বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যাতে তা যথাযথ ব্যবহার হয় সেটা নীতি নির্ধারকদের খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে জোর দিয়ে যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আমাদের এখন থেকে শিক্ষা ব্যবস্থায় সমন্বয় আনতে হবে। সামগ্রিক চিন্তা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি আমরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published.