“অগ্নিঝরা মার্চ ১৯৭১” স্বাধীনতার ঘোষণা ও মহাসংগ্রাম গাঁথা।

Spread the love

অগ্নিঝরা মার্চ ১৯৭১
স্বাধীনতার ঘোষণা ও মহাসংগ্রাম গাথা।
————————পর্বঃ-১————————

২_মার্চ বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি পেয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ; একটি মানচিত্র, একটি জাতীয় সঙ্গীত ও একটি পতাকা। এই নিয়ে আমরা গর্বিত কেননা আমরা বাঙ্গালী।

২ মার্চ ১৯৭১ প্রথম পতাকা উড়েছিল বাংলার আকাশে। সেই কারণে এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১ মার্চ ১৯৭১ কোন কারণ ছাড়াই পুর্বনির্ধারিত ৩ মার্চ অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করেন পাকিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান।

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হবার পর ২ মার্চ ১৯৭১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিশাল সমাবেশ চলছিলো। এ সমাবেশে যখন আ স ম আবদুর রব বক্তব্য রাখছিলেন তখন নগর ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে রোকেয়া হলের দিক থেকে মঞ্চস্থলে মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসেন।

তখন তৎকালীন ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ নেতা আ স ম আবদুর রব, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন এবং নূরে আলম সিদ্দিকী সেই পতাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকার প্রথম ডিজাইনার হলেন শিবনারায়ণ দাশ। তিনি ছিলেন একজন ছাত্রনেতা। ১৯৭০ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং (উত্তর) কক্ষে রাত এগারটার পর পুরো পতাকার ডিজাইন সম্পন্ন করেন। এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১ এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়।

ইতিহাসটা বেশ পেছনের——–
————-১৯৬৯ সাল ঢাকা সেনানিবাসের ১৪ পদাতিক বাহিনীর সদর দফতরে স্থাপিত ট্রাইবুনালে তখন বিচার চলছিল তথাকথিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার’ আসামিদের।

’৬৯-এর চলমান ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি সামরিকচক্র যখন বুঝতে পারল এই মিথ্যা প্রহসনের মামলা আর চালিয়ে যেতে পারবে না, তখনই তারা সামরিক ব্যারাকে বন্দি সার্জেন্ট জহুরুল হককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। অজুহাত তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

সেদিন ছিল ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের তোড়ে ভেস্তে যায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পাতানো বিচারের খেলা। এরপর বাংলার সংগ্রামী জনতা তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছিনিয়ে আনে কারাগার থেকে।

পাকিস্তানি সেনা প্রশাসনের এ পরাজয়ের পটভূমিতে ক্ষমতার হাত-বদল হলো আর একবার।
১৯৬৯ এর ২৫ মার্চ আইয়ুব খানের স্থলাভিষিক্ত হলেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। জারি করলেন ফের মার্শাল ল’। সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ হলো।

এরপর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ১১ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করে।

১৯৬৯-এর শেষের দিকে ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়।

তদনুযায়ী ’৭০-এর জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস ৭ জুন। ঐ দিন রেসকোর্স ময়দানে প্রথম নির্বাচনী সভার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।

সিদ্ধান্ত হয় ঐ দিন পল্টন ময়দানে (রেসকোর্সে সভার আগে) কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে বাহিনী পতাকা (রেজিমেন্টাল কালার) গ্রহণ করে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। প্রশ্ন হলো কেমন হবে বাহিনী পতাকা। এই বাহিনীর সঙ্গে নেতৃস্থানীয় যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে আ.স.ম আব্দুর রব, কাজী আরেফ আহমেদ, শেখ শহিদুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি), হাসানুল হক ইনু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, চিশতি শাহ্ হেলালুর রহমান, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, শিবনারায়ণ দাস, আব্দুল্লাহ সানি, মইনুল ইসলাম চৌধুরী, গোলাম ফারুক, ফিরোজ শাহ্, মোঃ খসরু উল্লেখযোগ্য।

পতাকা তৈরি নিয়ে মিটিং হল ইকবাল হলের ১০৮নং কক্ষে। এ কক্ষটি বরাদ্দ ছিল তৎকালীন ছাত্রনেতা আ.স. ম. আব্দুর রবের নামে। কাজী আরেফ আহমেদের প্রস্তাব অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হলো পতাকায় সবুজ জমিনের ওপর থাকবে একটি লাল বৃত্ত, আর লাল বৃত্তের মাঝে থাকবে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র। সবুজ জমিন বাংলার চির সবুজের প্রতীক, লাল সূর্য রক্তে রাঙা হয়ে উঠবে স্বাধীনতার সূর্য আর জন্ম নেবে একটি নতুন দেশ। সোনালি আঁশের রঙে হবে তার পরিচয়। লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি রঙের মানচিত্র তারই প্রতীক।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ।
এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১১৬ নং কক্ষে রাত এগারটার পর শিবনারায়ণ দাশ পুরো পতাকা ডিজাইন সম্পন্ন করেন। সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সের টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন।

২৩ মার্চ ১৯৭১ ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিবনারায়ন দাশের ডিজাইন করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সালে কলকাতার পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এটাই বাংলাদেশের বাইরে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপঃ
১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটুয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এ রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়।

বাংলাদেশের পতাকা আয়তাকারের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬ এবং মাঝের লাল বর্ণের বৃত্তটির ব্যাসার্ধ দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ, পতাকার দৈর্ঘ্যের ২০ ভাগের বাম দিকের ৯ ভাগের শেষ বিন্দুর ওপর অঙ্কিত। লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরল রেখার ছেদ বিন্দু হলো বৃত্তের কেন্দ্র। অবশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এ পতাকা থেকে বাংলাদেশের মানচিত্রটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

যারা এই পতাকার পরিকল্পনা, ডিজাইন, তৈরী এবং উত্তোলনের সাথে জড়িত ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের কাছে পূজনীয়। আপনাদের সম্মিলিত মেধা ও প্রচেষ্ঠায় অঙ্কিত পতাকা সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করে দিয়েছে।

এই পতাকা স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে বাঙালি জাতির পরিচয় বহন করছে। জাতি তাদেরকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা সাথে; গর্বের সাথে। এই পতাকা আমাদের জাতি সত্তা।

যতদিন পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র থাকবে ততদিন এই পতাকা বেঁচে থাকবে মাথা উঁচু করে।
”””'””””””””””””””””””””””””””””””””””””'””
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু——————
—————জয়তু বঙ্গকণ্যা শেখ হাসিনা।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

পুনঃপোস্ট

প্রথম পোস্টঃ—২ মার্চ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ।
———————–চলবে——————–

Writer: Md.Shamsul

Albd.org

Leave a Comment

Your email address will not be published.