বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।

Spread the love

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তুরস্কে কামাল আতাতুর্ককে বলা হয় তুরস্কের পিতা। আতাতুর্ক মানে তুরস্কের পিতা। বঙ্গবন্ধুও তেমনি বাংলাদেশের জাতির পিতা। আতাতুর্কের সঙ্গে এবং মিসরের নাসেরের সঙ্গে তার আদর্শগত মিল আছে। আতাতুর্কের তুরস্কের আগে দেশটি ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। প্রথম মহাযুদ্ধের পর পরাজিত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে পশ্চিমা শক্তি খণ্ডবিখণ্ড করে ফেলে। কামাল আতাতুর্ক এই বিদেশি শক্তিকে বিতাড়িত করে আধুনিক তুরস্কের জন্ম দেন। সে জন্যই তিনি হন আতাতুর্ক। বঙ্গবন্ধুও বাংলাদেশের জাতির পিতা- এ জন্যই যে, পাাকিস্তানিরা বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির নাম মুছে ফেলেছিল। বঙ্গবন্ধু এই নাম পুনরুদ্ধার করেন এবং বাঙালির লুপ্ত পরিচয়ও আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাঙালির স্বাধীন নেশন স্টেটের প্রতিষ্ঠাতাও। অন্যদিকে মিসরের জামাল নাসেরের সঙ্গেও তার মিল আছে। জামাল নাসের মিসরকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র থেকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করেন। এই রাষ্ট্রের ভিত্তি ধর্ম নয়, ধর্মনিরপেক্ষ আরব জাতীয়তা। বঙ্গবন্ধু একটি মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটান। তার এই প্রচেষ্টা ব্যাহত হয় একাত্তরের পরাজিত ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির চক্রান্তে। তারা দেশটির ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি ধ্বংস করে দেশটিকে আবার আধা সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিবর্তন করে। দেশটিতে শোষণভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাস জাঁকিয়ে বসে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দায়িত্ব নিয়ে এখন বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসীন। তিনি শুধু বাংলাদেশে স্বৈরাচারী সাম্প্রদায়িক শাসন উৎখাত করেন নি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে এনেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে স্বাভাবিকভাবেই জাতি উৎসবমুখর। কিন্তু এই উৎসবের পাশাপাশি তার আদর্শের কথাও আজ আমাদের স্মরণে রাখা উচিত। আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং আদর্শের কথা সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু তার জীবনজুড়ে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বিভিন্ন ভাষণ-বক্তৃতায় দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে তার বজ কণ্ঠ জ্বলে উঠেছিল। এমনকি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময় তিনি পান নি। শেখ হাসিনার সামনে এই সময় ও সুযোগ রয়েছে। তিনি সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেবেন, এটা তার কাছে জাতির একান্ত আশা। 

বঙ্গবন্ধু আজ নেই। কিন্তু তার জীবন ও কর্ম আমাদের সামনে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা তাকে শুধু স্মরণ করা নয়, তার আদর্শবাদ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে পারি।♦লন্ডন থেকে

Leave a Comment

Your email address will not be published.